পেটের চর্বি কমানোর ৯টি সহজ উপায়
অনেকেই আছেন যারা পেটের চর্বি নিয়ে নানা রকম সমস্যায় ভুগে থাকেন । শুধু এটা একটা সমস্যাই মনে করেন না এটা কি একটা ঝামেলার চেয়েও বেশি মনে করেন কারণ এটি আপনার পোশাককে আঁটসাট করে তোলে। এবং এটির কারণে আপনার নিজের কাছে নিজেকে অনেক আনফিট মনে হয় এবং অনেক কাজেই নিজের আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
এবং এটি আপনাকে নানা রকম দুশ্চিন্তায় ভুগায়। এটি মূলত একটি ভিসারাল ফ্যাট যা পেটের গহরের গভীরে থাকে এবং লিভার অগ্নাশয় এবং অন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিকে ঘিরে থাকে। এই ধরনের ফ্যাট গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে যেমন হৃদরোগ ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের মতো অবস্থার কারণও হতে পারে। পেটের চর্বি কিভাবে জমা হয় এবং কার্যকর ভাবে কমানোর কৌশল গুলে বোঝা আপনার অত্যন্ত জরুরী।
আরো পড়ুন: পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
পেজ সূচিপত্র :
- পেটের চর্বি কি
- পেটে চর্বি কেন জমে
- পেটের চর্বির কারণে যেই ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আপনি পড়তে পারেন
- পেটের চর্বি কমানোর উপায় সমূহ
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস
- আপনি আপনার জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে পেটে চর্বি কমাতে পারেন
- মেডিটেশন করুন
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- খাবারের তালিকা তৈরি করুন
- যে খাবারগুলো খেতে পারেন
- মন্তব্য
পেটের চর্বি কি
পেটের চর্বি সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় ত্বকের নিচের চর্বি এবং ভিসারাল ফ্যাট। ত্বকের নিচের ছবি সাধারণত ত্বকের ঠিক নিচে থাকে এবং পরিমিত পরিমাণে তুলনামূলকভাবে ক্ষতিকারক নয়। ঠিক অন্য দিকে ভিসার আল ফ্যাট অভ্যন্তরীনাঙ্গ গুলিকে ঘিরে থাকে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিতে পারে।
পেটে চর্বি কেন জমে
পেটে চর্বি জমার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে,
- অনুশীলনের অভাব: বসে থাকা জীবনধারা এবং শারীরিক ক্রিয়া-কলাপের অভাব পেটে চর্বি জমা অন্যতম একটি কারণ।
- জিনতত্ত্ব: পেটের চারপাশে সহ শরীরের চর্বি কিভাবে বিতরণ করা হয় তাতে জেনেটিক্স ভূমিকা পালন করে।
- স্ট্রেস: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার দিকে পরিচালিত করতে পারে যা চর্বি জমাতে সাহায্য করে বিশেষ করে মধ্যভাগের চারপাশে।
- বয়স: বেশিরভাগ লক্ষ্য করা যায় বয়স বাড়ার সাথে সাথে পেশির ভর কমতে থাকে এবং ছবি বৃদ্ধি পায় বিশেষ করে পেটের চারপাশে।
পেটের চর্বির কারণে যেই ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আপনি পড়তে পারেন
পেটে অতিরিক্ত চর্বি আপনাকে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুকিয়েতে ফেলতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে :
- হৃদরোগ: ভিচারাল ফ্যাট এমন পদার্থ নিঃসরণ করে যা প্রদাহ কে উৎসাহিত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- টাইপ টু ডায়াবেটিস: পেটের চর্বি ইনসুলিন এর কার্যকারিতা হস্তক্ষেপ করে যার ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস হয়।
- ক্যান্সার: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পেটের চর্বি এবং নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে একটি জোকসূত্রের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যদিও আরো গবেষণা প্রয়োজন।
পেটের চর্বি কমানোর উপায় সমূহ
- পেটের চর্বি কমানোর অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা। যেমন লাল চা বা লাল আটা তৈরি খাবার এবং শাকসবজি ও ফল মূল জাতীয় খাবারে মিলবে আঁশ।
- ঝাল খাবার খান পেটের মেদ কমে যাবে। কি অবাক হচ্ছেন? এখানে অবাক হবেন না,ঝাল খাবেন কিন্তু সেই ঝালে আসবে দারুচিনি আদা গোলমরিচ এবং কাঁচা মরিচ থেকে এসব রান্নায় ব্যবহার করুন এই মসলা স্বাস্থ্যকর ও পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।
- কাঁচা রসুনের কোয়া কয়েকটা সকাল বেলা চুষে খান। দেখবেন এই অভ্যাসের কারণে দ্রুত আপনার ওজন কমতে থাকবে আর পেটের চর্বি ঝরতে থাকবে। কাঁচা রসুন শরীরের রক্ত প্রবাহ সহজ করে এবং পেটে চর্বি জমতে দেয় না।
- অনেকেই খাবার খাওয়ার পরে বসে থাকেন বা শুয়ে থাকেন। তাদের খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না ফলে পেটের চর্বি জমতে থাকে সেজন্য খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে বসে না থেকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাটাহাটি করুন এতে আপনার পেটের চর্বি কমতে সাহায্য করবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের চেষ্টা করুন যেমন, ফল সবজি গোটা শস্য এবং ডাল জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষন পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় উন্নতি ঘটায়। আদা জল সকালে পান করুন এতে আপনার ক্ষুধা নিবারণ হবে এবং ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও শরীরকে হাইডেটেড রাখতে জল,ভেষজ চা বা লেবু শসা মিশ্রিত জল পান করুন। একেবারে বেশি খাবার না খেয়ে সারাদিনে পাঁচ থেকে ছয় বার অল্প অল্প করে খাবার খেয়ে যান এতে আপনার চর্বি বাড়ার আশঙ্কা কমে যাবে। ঝাল খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন যা ও খাবার খেলে পেটের চর্বি কমতে থাকে।
আপনি আপনার জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে পেটে চর্বি কমাতে পারেন
আপনি আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন করে পেটের চর্বি কমাতে পারেন যেমন পেটের চর্বি কমানোর জন্য আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করা আপনার জন্য অপরিহার্য বা জরুরী। কম ঘুম এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে পেতে চর্বি জমাতে পারে তাই পর্যাপ্ত ঘুমানোর অভ্যাস করুন। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন কারণ এটি চর্বি জমার একটি অন্যতম কারণ। রাতের খাবার খেয়ে তাড়াতাড়ি সেরে ফেলার চেষ্টা করুন এবং খাওয়ার প্রায় আধা ঘন্টা পর পানি পান করুন। কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন, সকালে কয়েকটি কাঁচা রসুনের কোয়া চিবিয়ে খেলে উপকার পেতে পারেন। আখরোট কাঠবাদাম এবং সামুদ্রিক মাছের মতো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
মেডিটেশন করুন
দিনের শুরুতে ১০ মিনিট এখন মেডিটেশনের জন্য। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে মেডিটেশন বেশ কার্যকর। স্টেজ ওজন বিশেষ করে পেটের চর্বি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। পেটের চর্বি কমাতে চাইলে প্রতিদিন সকালে দশ মিনিট মেডিটেশন করুন। মেডিটেশন স্ট্রেস হ্রাস কমাবে এবং হরমোন ব্যালেন্স করতে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ওজন কমাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। পেটের মেদ কমানোর জন্য করতে পারেন সহজ কিছু ব্যায়াম। ব্যায়াম করার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকালে সূর্যোদয়ের পরে। মর্নিং ওয়াক জগিং ইয়োগা অথবা এইচ আই আই টি ওয়াকআউট করুন। দিনের শুরুতে আগে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে শরীরকে একটিভ করে তারপর ব্যায়াম করুন। এটি দ্রুত ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করবে প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার জন্য সময় বের করুন। এবং এটি নিয়মমাফিক করতে থাকলে আপনার পেটের চর্বি কমবে।
খাবারের তালিকা তৈরি করুন
সারাদিন কি কি খাবেন তার একটি তালিকা সকালে করে ফেলুন সকালের এ প্ল্যানিং আপনার সারাদিনের জাঙ্ক ফুড বা আনহেলদি খাবার খাওয়াকে কন্ট্রোল করবে।
আরো পড়ুন: বাচ্চাদের রক্ত আমাশয় হলে করণীয়
যে খাবারগুলো খেতে পারেন
যে খাবারগুলো আপনার পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করবে তার মধ্যে অন্যতম হল
- ডিম এটি একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যা পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ডিম পেট দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
- কফি খাওয়ার অভ্যাস করুন কারণ কফিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন যা পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে তবে ব্ল্যাক কফি বা চিনি ছাড়া কফি চর্বি কমাতে বেশি কার্যকর।
- ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি বেশ কার্যকরী। গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি মেটাবলিজম ইম্প্রুভ করে এবং পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পেতে জমে থাকা চর্বি কমাতে খুবই বেশি কার্যকর।
মন্তব্য
নিয়ন্ত্রিত খাদ্য ভাস ও সঠিক জীবন যাপনের মাধ্যমে শারীরিক প্রার্থীর মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। যেহেতু পেটের চর্বি একটি বিব্রত কর বিষয়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার যে পেটের মেদ বাড়াই তা নয় বেশি ক্যালরিযুক্ত খাবারই পেটের চর্বি বাড়াতে পারে। একবার পেটে চর্বি জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না এ ধারণা ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলে সহজেই আপনি আপনার পেটের চর্বি কমে ফেলতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে সাধারণত মদ্যপান মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ ডুবো তেলে ভাজা খাবার কোমল পানীয় অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার নিয়মিত লাল মাংস খাওয়া ইত্যাদি পেটের ছবি বাড়িয়ে তোলার পিছনে মারাত্মক ভূমিকা রাখে অতএব যথাসাধ্য চেষ্টা করুন এই বিষয় গুলোকে খেয়াল রাখার। এবং নিয়মিত ব্যায়াম এবং মেডিটেশন এর মাধ্যমে সহজেই আপনি আপনার পেটে চর্বি কমাতে পারেন।

.webp)
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url