মিষ্টি আলু উপকারিতা ও অপকারিতা
মিষ্টি আলু হলো একটি লতানো বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ যার কর্ণ বা শিকড় খাওয়া হয়।
এটি বাংলাদেশে পরিচিত একটি সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ভিটামিন বি ভিটামিন
সি পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম থাকে ।এটি একটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে
বাংলাদেশে পরিচিত। এতে থাকা শর্করা শক্তির একটি ভালো উৎস।
এতে প্রচুর ফাইবার থাক বা আঁশ থাকে যা আমাদের হজম শক্তি কে উন্নত করতে এবং
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের চোখের জন্য
অনেক ভালো। এছাড়াও নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মিষ্টি আলু। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে
একটি মিষ্টি আলোতে প্রায় ১০০ এরও বেশি ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের ভিটামিনের
চাহিদা পূরণ করে থাকে। আমাদের অনেকেরই হাত পায়ের আঙ্গুল ফোলা থাকে যেটাকে এটা
কমাতে সাহায্য করে। আবার অনেকের প্রসবের সমস্যা থাকে যা দূর করতে এর পাতা ও মূল
ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আরো পরুন ঃ রাতে ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার উপকারিতা
পেজ সূচিপত্র :
মিষ্টি আলু পুষ্টিগুনে ভরপুর
মিষ্টি আলু পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাদ্য। একটি আলুতে ১০০ টির ক্যালরি রয়েছে দুই
গ্রাম প্রোটিন রয়েছে ২২ গ্রাম স্বেচ্ছায় রয়েছে তিন গ্রাম আঁশ রয়েছে এবং জিরো
গ্রাম চর্বি রয়েছে, এছাড়াও একটি মিষ্টি আলু থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৬০ ভাগ
ভিটামিন এ পাওয়া যায়। এবং ১২.৬ ভাগ ভিটামিন বি ৬ ও ২৮ ভাগ ভিটামিন সি এটাতে
রয়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিন এর চমৎকার একটি উৎস। যা
আমাদের শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এবং এতে থাকা ভিটামিন সি
আমাদের চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
ডায়াবেটিস হলে অনেকেই মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন, এ কারণেই আপনি হয়তো
মনে করতে পারেন মিষ্টি আলু খেলে কিভাবে সম্ভব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা? কিন্তু
অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে মিষ্টি আলুতে প্রচুর পুষ্টি কর উপাদান সমূহ থাকায় তার
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে পাশাপাশি হজমেরও সমস্যা দূর করে
থাকে, মিষ্টি আলুতে ফাইবার থাকার ফলে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা
করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা দিনে একবার হলেও মিষ্টি আলু খেতে পারেন, মিষ্টি আলুতে
জিআই অর্থাৎ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী
তাই অল্প পরিমাণে খেলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। বিশ্বে প্রায়
400 ধরনের মিষ্টি আলু রয়েছে এর মধ্যে জাপানি ও বেগুনি মিষ্টি আলু স্বাস্থ্য
উপকারিতা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। সর্বদা মধ্যম আকারের মিষ্টি আলো খেতে পারেন,
এটি সালাদ বা সবজির সঙ্গে ছাড়াও বিভিন্নভাবে আপনি আপনার খাবারের যুক্ত করতে
পারেন।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
আপনি যদি মিষ্টি আলো নিয়ম মত খান তবে একে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে
যেমন এটিকে আপনি সিদ্ধ বা ভাবা পদ্ধতিতে রান্না করতে পারেন যাতে ফ্যাট কম থাকে।
ফাস্টফুড এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যভাস অনুসরণ করতে পারেন। অন্য পুষ্টিকর সবজি
যেমন মিষ্টি কুমড়া গাজর ইত্যাদির সাথে পরিণত পরিমাণে মিষ্টি আলু খেতে পারেন এতে
করে এটি আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
ভিটামিনে ভরপুর
মিষ্টি আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই
ভিটামিন সি আমাদের শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রী রেডিকেল থেকে কোষকে রক্ষা করে এবং যেসব
দীর্ঘস্থায়ী রোগ সেই সব রোগ থেকে আমাদেরকে সুরক্ষিত করে। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে
পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফাইবার এর মত ভিটামিন রয়েছে রয়েছে। যা আমাদের হজমে
সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে দৃষ্টিশক্তি ও ত্বক ভালো
রাখতে সাহায্য করে শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে
সাহায্য করে এবং অনেকেই কিডনিতে পাথর জনিত রোগে ভুগে থাকেন যা এই মিষ্টি আলু থেকে
এর পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে
আমাদের পেটের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে অনেক কার্যকরী এই মিষ্টি আলু। এতে দুই
ধরনের ফাইবার থাকে একটি হলো সলিউবল এবং আরেকটি হলো ইনসোলিউবল। এবং এই দুটি ফাইবার
থেকে নানা ধরনের উপকারিতা আসে সাধারণত সলিউমুর ফাইবার জল শোষণ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য
সমস্যা দূর করে থাকে । এবং এবং আমাদের পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই দুই ধরনের
ফাইবারের প্রয়োজন হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধক
মিষ্টি আলুতে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা অনেক সময় ক্যান্সারের বিরুদ্ধে
লড়তে সাহায্য করে। মিষ্টি আলুতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার
প্রতিরোধক,গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয় এই
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী
মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, লাল কমলা রঙের মিষ্টি আলুতে
এই যৌগ থাকে। এটি শরীর বিক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিটামিন এতে রূপান্তরিত হয়ে
থাকে যা চোখের কোষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং মিষ্টি আলুতে থাকা
ভিটামিন সি আমাদের চোখের জন্য অনেক উপকারী।
আরো পরুনঃ মধু ও কালোজিরা একসাথে খাওয়ার উপকারিতা
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
মিষ্টি আলু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে মিষ্টি আলুতে
থাকা আন্ত সায়ানিন মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক ও কর্ম কম রাখতে সাহায্য করে কারণ এটি
প্রদাহ কমায় এবং ফ্রি রেডিক্যাল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সবজি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং
ডিমেন্সিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি 13% পর্যন্ত কমাতে সক্ষম। এবং মস্তিষ্কের
কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম।
হার্টের ঝুঁকি কমায়
মিষ্টি আলোতে থাকা প্রায় অর্ধেক ফাইবারই দ্রব্যনীয়, যাক রক্তের কোলেস্টরলের
মাত্রা কমাতে সাহায্য করে আমরা জানি উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে হৃদরোগে ঝুঁকি
বাড়ে। তাই পর্যাপ্ত দ্রবণীয় ফাইবার হার্ট সুরক্ষিত রাখার একটি চমৎকার উপায়।
মিষ্টি আলু এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ,বিশেষ করে এর মধ্যে রয়েছে বিটা
ক্যারোটিন,এবং বিটা ক্যারোটিন একটি ভিটামিন এ উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত রঞ্জক পদার্থ
যা শরীরে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়, ইতি মূলত কমলা হলুদ এবং সবুজ রঙের খাবারে
পাওয়া যায়। যেমন গাজর ব্রকলি টমেটো এবং মিষ্টি আলু।
মিষ্টি আলু একটি উপকারী খাদ্য
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ভিটামিন সি প্রয়োজনীয় খনিজ
পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন বড় বড় রোগ থেকে সুরক্ষিত
করতে সাহায্য করে, মিষ্টি আলু খেতে মিষ্টি , সেদ্ধ মিষ্টি আলু খেতে বেশ মজাদার,
এবং এটি ভিটামিন খনিজ এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ক্যান্সারের মতো রোগ
থেকেও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।
মিষ্টি আলুর অপকারিতা
মিষ্টি আলু অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং অনেক স্বাস্থ্য উপকারী প্রদান করলেও কিছু কিছু
মানুষের জন্য এটি কম করে খাওয়া এবং পুরোপুরি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন
পরামর্শকরা, কারণ এতে এলার্জির ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও চুলকানি বমি বমি ভাব পেট
ব্যথা বা শরীরের যে কোন অংশ ফুলে যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এটি
কিডনি স্টোন ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে তাই অতিরিক্ত মিষ্টি আলু খাওয়া থেকে এড়িয়ে
চলা চলাই ভালো ।

.webp)
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url